ঝালকাঠিতে পিতা প্রতিবন্ধী, মা দৃষ্টিহীন, ক্ষুধার তাড়নায় কাঁদে সন্তানরা Latest Update News of Bangladesh

শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৫৩ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




ঝালকাঠিতে পিতা প্রতিবন্ধী, মা দৃষ্টিহীন, ক্ষুধার তাড়নায় কাঁদে সন্তানরা

ঝালকাঠিতে পিতা প্রতিবন্ধী, মা দৃষ্টিহীন, ক্ষুধার তাড়নায় কাঁদে সন্তানরা




ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ পঙ্গু স্বামী মো. রুস্তুম আলী খানকে ঘরে রেখে জন্মান্ধ স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষাবৃত্তির আয় দিয়ে বেশ ভালই চলছিলো ৪ শিশু সন্তানসহ মোট ৬ সদস্যের পরিবারটি। কিন্তু করোনা ভাইরাসে বাহিরে বের হতে না পেরে গৃহবন্দী হয়ে পড়েন একমাত্র আয়ের উৎস ভিক্ষাবৃত্তি করা অন্ধ মা হোসনেয়ারা বেগম। ফলে বেশকিছু দিন ধরে ঘরে খাবার না থাকায় চরম সংকটে পড়ে না খেয়েই দিনাতিপাত করছেন ঝালকাঠির রাজাপুরের গালুয়া বাজারের ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন এলাকার এই নিতান্তই অসহায় পরিবারটি।

ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে পঙ্গু স্বামী ও ৪ শিশু সন্তান অন্ধ হোসনেয়ারাকে ভিক্ষার জন্য বাহিরে বের হতে কাকুতি মিনতি শুরু করেন। বাহিরে তেমন লোকজন নেই এবং আইনশৃঙ্খলার ভয়ে বাহিরে বের হতে পারছেন না তিনি। এছাড়া তার কোলের শিশুটিকে নিয়ে ক্ষুধার্ত পেটে বেশি সময় হাটতেও পারেন না তিনি।

এভাবেই অসহ্য যন্ত্রণাময় জীবনযাপনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন জন্মান্ধ ভিক্ষুক মা হোসনেয়ারা বেগম। শিশু সন্তান ফয়সাল ও ফাহিম বলছে, বাবাতো হাটতে পারে না। মা তুমি ভিক্ষা করতে যাবা না? আমরা কি খাবো? ঘরে তো কিছু নেই। পঙ্গু স্বামী মো. রুস্তুম আলী খান পঙ্গু অবস্থায়ই নৌকায় মাঝিগিরি করে যতদূর পারেন আয় করেন। কিন্তু বর্তমানে তাও বন্ধ। এজন্য তার অন্ধ স্ত্রী হোসনেয়ারাকে ভিক্ষা করার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করেন শিশুদের আর্তনাদ সহ্য করতে না পেরে।

হোসনেয়ারা বেগম বলেন, আমি জন্ম থেকেই দুটি চোখে দেখতে পাই না। বিয়ের আগেই গাছ থেকে পড়ে গিয়ে তার স্বামীর একটি পা ভেঙ্গে যায়। সেই থেকে সে ছোট একটি নৌকায় করে ভান্ডারিয়া থেকে গালুয়া বাজারের বিভিন্ন দোকানির মালামাল এনে দেয়ার কাজ করে আসছিলেন। বিয়ের পরে সেই রোজগার দিয়ে সংসার চললেও সন্তান হওয়ার পরে সংসারে অভাব দেখা দেয়। স্বামীর ঘরের জমিটুকু ছাড়া অন্য কোন জমাজমি বা অন্য কোন আয়ের উৎস নাই। তাই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বাধ্য হয়ে হোসনেয়ারা ভিক্ষার ঝুলি হাতে নেন।

এক এক করে পাঁচটি ছেলে সন্তান জন্ম নিলেও কয়েকমাস আগে নিজ ঘরের পাশের পুকুরে পড়ে একটি সন্তান মারা যায়। বর্তমানে তাদের ফয়সাল (৯), ফাহিম (৬), ফাইজুল (৫) ও পাঁচ মাস বয়সের রোহানসহ মোট চার ছেলে রয়েছে। করোনা সমস্যার কারণে স্বামীর রোজগার বন্ধ এবং অপরদিকে কোলের শিশু সন্তান ও করোনা সমস্যার কারণে হোসনেয়ারাও ভিক্ষা করতে যেতে পারছে না। আশপাশের মানুষের কিছু সাহায্য দিয়ে বিগত দিন সংসার চলছিলো। বর্তমানে ঘরের খাবার ফুরিয়ে যাওয়ায় এখন স্বামী রুস্তুম তাকে ভিক্ষা করতে যেতে বলে।

নানা সংকট ও ভয়ে সে যেতে না চাইলে রুস্তুম নিজের পেটের ক্ষুধা ও সন্তানের খাবারের জন্য এক পর্যায় তাকে গাল মন্দ করতে বাধ্য হন। হত দরিদ্রের সংসার হলেও বিগত দিনে তাদের মধ্যে ভালোবাসার কোন কমতি ছিলো না। কেঁদে কেঁদে হোসনেয়ার আরোও বলেন, স্বামীর জ্বালায় রাগ করে বাবার বাড়ি যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু মায়ের সংসারও চলছে ভিক্ষা করে অপরদিকে কোলের পাঁচ মাস বয়সের ছোট ছেলে রোহান আমার জন্য কাঁদবে। তাই যেতে পারিনি।

হোসনেয়ারা বেগম আরোও জানান, বর্তমানে তার বয়স চৌত্রিশের কোঠায়। তিনি জন্ম থেকেই দু চোখে আদৌ দেখতে পান না। মানুষের বাড়িতে কাজ করার ক্ষমতাও নেই ওই মায়ের। লেখা পড়াও করতে পারেনি এ অবস্থায়। এমন পরিস্থিতিতে পরিবার তাকে বোঝা মনে করে পরিত্রাণ পেতে তাকে বিবাহ দেয়া হয় উপজেলার গালুয়া গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী রুস্তুম আলীর সাথে। তার স্বামী দুটি পা দিয়ে হাটতে পারে না। আর শিশুদের ভরণ পোষণের দায়ীত্বইবা কে নিবে? পারবে তো ওরা সামাজিকভাবে বড় হতে? পারবেতো ওরা লেখাপড়া করতে?

অন্ধ মায়ের এসব প্রশ্ন প্রতিনিয়ত তাড়া করছে তাকে, তার এ সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যত দুশ্চিন্তা। তাই অন্ধ মা দেশের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছে ফুটফুটে ছোট এ সোনামণিদের সামাজিকভাবে গড়ে তোলার জন্য দু’হাত পেতে সাহায্যের আবেদন করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, সন্তানদেরকে প্রতিবন্ধী ছাড়াই নিখুঁতভাবে আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। এ যেন গোবরে পদ্মফুল ফুটেছে।

এ বিষয়ে গালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর মতিউর রহমান জানান, করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ বা সরকারি কোন সহায়তা পায়নি ওই পরিবারটি। আর যে অল্প বরাদ্দ দেয়া হয় তা কাদের দেয়া হবে তা নির্ধারণ করে দেয়া হয়, সে তালিকায় তার নাম পড়ে না। তিনিও সকলকে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানান।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD